আমার বাবা............
----তোমার লেখক
যারা তোমাদের আব্বুকে অনেক ভালবাস তাদের জন্য এ গল্পটি..........
ছোট্ট মেয়ে অন্তর। এখন ওর বয়স 6। এক বছর থেকেই বাবা ভক্ত। বাবা খেল কিনা,
মশারি খাটিয়েছে কিনা, শীতে কাঁথা গাঁয়ে জড়িয়েছে কিনা, পানি লাগবে
কিনা................আরো কত কি। ছোট্ট মেয়ে সাধ্য মত খেয়াল রাখে বাবার
দিকে। বাইরে কাজে যাওয়ার সময়ে দৌড়ে গিয়ে বাবার জুতা মুছে দেয়। বাবাকে টাটা
দিয়ে বিদায় জানায়। খুব সুখে যাচ্ছিল অন্তরদের সংসার।
.........একদিন.............
বাবা রাতে বাড়ি ফেরার পথে গাড়ির নিচে চাঁপা পড়ে ডান পা খুয়োন। আয় রোজগার
নেই বললেই চলে। মাও শিক্ষিত, কিন্তু চাকরি করতেন না.........মানুষের বাড়ি
কাজ করাও সম্ভব না। চাকরিও নেই। তিন বেলার পরিবর্তে কোনমতে এক বেলা খাবার
জোটে অন্তরদের পরিবারে। বাবার আর এ কষ্ট সহ্য হয় না। ঠিক করেন ঢাকায় গিয়ে
চাকরি করবেন এবং বাড়িতে স্ত্রী ও অন্তরের জন্য মাসে মাসে টাকা পাঠাবেন।
কোনভাবেই অফিসের চাকরি ম্যানেজ করতে পারলেন না অন্তরের আব্বু। শেষমেষ
সাইফুরসের বিল্ডিং এর নিচে দাড়োয়ানের চাকরি পেলেন। 3000 টাকা বেতন। খাবার ও
থাকার খরচ নিজের।
অন্তরের বাবা চিন্তা করলেন কোন মেসে গেলে ভাড়া
1000 এবং খাবার 1200 টাকা চলে যাবে। 800 টাকা দিয়ে মেয়ের পড়াশুনার খরচ,
খাবার খরচ মেটানো সম্ভব নয়। তাই সকালে একবার খেয়েই কাটিয়ে দেন পুরো দিন।
রাতে একটু পানি ও কয়েক মুষ্ঠি মুড়ি।
এদিকে অন্তর মাকে বারবার
জিজ্ঞেস করে ‘বাবা ঠিকমত খায় তো? মশারি খাটিয়ে ঘুমায় তো? কে তার জুতো মুছে
দেয় বাইরে যাবার সময়? মাকে খুব অনুরোধ করে বাবাকে ফোনে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।
অন্তর একদিন রাতে কথা বলে বাবার সাথে................
বাবা, তুমি
রাতের খাবার খেয়েছ? আমরা খেয়েছি.........ছোট মাছ দিয়ে গরম ভাত। আব্বু কি
মজা লেগেছে! তুমি বাসায় থাকলে আগের মত খাইয়ে দিতাম আব্বু। বাবার চোখ বেয়ে
অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। মনে মনে ভাবছে তুমি গরম ভাত খেতে পারছ এর জন্যই তো আমি
ঢাকায় থাকছি। আম্মু তুমি জাননা কিভাবে কাটাচ্ছি আমি। অন্তর বলে, আব্বু,
তুমি কি খেয়েছ? ‘হিম’...........“কি খেয়েছ আব্বু?” .....এই তো ড্রাইড রাইস,
ফ্রেশ ওয়াটার............পেট ভরে খেয়েছি মা। “ভাল আব্বু। আচ্ছা, তুমি কি
এখন ঘুমাবে? মশারি খাটিয়েছ? আমি থাকলে খাটিয়ে দিতাম আব্বু। বাবা মনে মনে
বলে.........মারে আমি তো মাটিতে ঘুমাই। একটা প্লাস্টিকের পাটি..একটি বালিশ।
মশারি খাটানো যায় না”.......তাড়াতাড়ি বাড়ি এস তোমার গলা ধরে ঘুমাবো।
আব্বু..........মাকে বলবানা........আমি রাতে ঘুমাই না। তোমার কথা চিন্তা
করি। তারপর দোয়া করি, তারপর ঘুমিয়ে পড়ি।”
ওকে অন্তর আম্মু মাকে বলবো
না। কিন্তু তুমি না ঘুমালে আমিও তো ঘুমাতে পারিনা। তুমি আজ থেকে তাড়াতাড়ি
ঘুমিয়ে পড়ো.........তাহলে আমারও ঘুম আসবে। “ঠিক আছে আব্বু”।
এভাবেই
কেটে যাচ্ছে দিন.........বেড়ে উঠছে অন্তর। একদিন বিয়ে হয়ে
যাবে.........বাবা এখনকার মতই একা হয়ে পড়বে। সব সুখ ত্যাগ করে ছোট্ট
অন্তরের জন্য ঢাকায় দাড়োয়ানের কাজ করছে।
এই তো
বাবা............ত্যাগের উজ্জ্বল উদাহরণ। বাবার মত কি কেউ হয়? যাদের
তোমাদের আাব্বু আছে তারা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছ? আব্বু তোমার জন্য কি
সয়ে যাচ্ছেন? কেন?
চল.....আজ বাবার হাতটি ধরে কাছে গিয়ে বলি “ আব্বু, তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি। তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা অাব্বু”।